নীড় জীব ও পরিবেশ বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের উন্নয়ন

বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের উন্নয়ন

লিখেছেন কৃষি সেবা
পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের উন্নয়ন

পরিবেশ ও ঋতু বৈচিত্র্যের ধরনের আমূল পরিবর্তন আজ সহজে অনুমেয়। কখনো কখনো গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সে.। সকালে আকাশে সামান্য মেঘের ঘনঘটা থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বা জলবায়ুর পরিবর্তন আজ বিশ্বে এক বহুল আলোচিত ও ভাবনার বিষয়। জলবায়ুর পরিবর্তন তথা উষ্ণায়ন পৃথিবীব্যাপী আতঙ্কের বিষয়ও বটে।
বিগত সত্তর দশকে আমরা আমাদের ছেলেবেলায় তাপমাত্রার এত পরিবর্তন কখনও দেখেনি। ঋতু বৈচিত্র্যের এমন খামখেয়ালিপনাও লক্ষ করা যায়নি। তবে আমার যতদূর মনে পড়ে ৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে গ্রীষ্মকালে কখনও এখনকার মতো এত গরম অনুভব করিনি। তখন চৈত্র-বৈশাখ মাসে বিলে, খালে, পুকুর এবং নদীতে প্রচুর পানি থাকতো। ওই সময় বিলে বাঁওড়ে মাছ ধরার ধুম পড়ে যেত। স্বাভাবিক নিয়মে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রচুর বৃষ্টি হতো। আর জ্যৈষ্ঠ মাসের বৃষ্টি তো রীতিমতো জ্যৈষ্ঠ ঢল নামে পরিচিত ছিল। এ সময় জ্যৈষ্ঠ ঢলে বিল-পুকুর অনেক সময়  এক দিনেই ভরে যেত। বৃষ্টির ঢলে শুকনো মাঠের ও বিলের কিনারে বৃষ্টির সাথে কই, শিং, বাইন ও টাকি মাছের দেখা মিলতো। এসব মাছ ফাল্গুন-চৈত্রে মাটির নিচে গর্তে থাকত। তখন মাটির নিচে পানির স্তর বা ধিঃবৎ ঃধনষব বড় জোর ১ থেকে ১.৫ মিটার নিচে থাকত। কিন্তু বর্তমানে মাত্র চার দশক পার হতে না হতেই মাটির নিচে বর্তমানে মাটির নিচে অনেক স্থানে গভীর নলক‚পেও খরা মৌসুমে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গভীর নলক‚পেও সেচের পানির মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় মাটির নিচে বর্তমানে গর্তে জীবিত কোনো মাছ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ফলে এখন যদিও বৈশাখ বা জ্যৈষ্ঠে মুষল ধারায় বৃষ্টি হয় তবুও আগের মতো গর্ত হতে মাছ বের হয়ে পানির সাথে সাথে মাছের দেখা মেলে না; জলাশয় বা পুকুর মাছে ভর্তি হয়ে যায় না। ঋতু পরিবর্তনের কথা এবং পরিবেশ বিপর্যয়, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয়। মনুষ্য সৃষ্ট কারণ ও  বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর প্রত্যক্ষও পরোক্ষ প্রভাবের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।


স্বাধীনতা উত্তরকালে আমাদের দেশে অনেক রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভাট, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাত কোটি লোক যেখানে দুইবেলা পেট ভরে খাবার পেত না; আজ সেখানে আনুমানিক ১৬ কোটি লোক তিন বেলা পেট ভরে ভাত ও পছন্দ  মতো খাবার খেতে পারছে। বর্তমানে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলার, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮.১৩ এবং বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ৩২.১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নতি হয়েছে (সূত্র : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯)। এখন বিভিন্ন শহরে গগনচুম্বী অট্টালিকা গড়ে উঠেছে। সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে। গ্রামের মানুষও এখন আর কয়লা বা ছাই দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে না। কুলি-মজুর থেকে শুরু করে সবাই সাবান, শ্যাম্পু, পেস্ট, ব্রাস ব্যবহার করে। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। গাড়ি চড়ে একদিনে ৩টি বিভাগীয় শহরে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। বিমান, প্রাইভেট হেলিকপ্টার ইত্যাদি ব্যবস্থা হয়েছে। রাস্তায় যাতায়াতের জন্য এসি বাস, ডেমো ট্রেন, মাইক্রোবাস ও নদী পথে স্পিডবোট ও এসি লঞ্চে ভ্রমণ করা সম্ভব হচ্ছে। ১৯৮০ সালে ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় গ্যাসসংযোগ হয়নি। অনেক বাসায় যেমন আগারগাঁও-শেওড়াপাড়ার মতো এলাকায়ও বিদ্যুৎসংযোগ ও তেমন বসতি ছিল না। উঁচু ভবন ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। তাও আবার   ৪-৫ তলার ঊর্ধ্বে নয়। তখন ঢাকায় অনেক অভিজাত এলাকাতেও কাঠের চুলায় রান্না হতো। কিন্তু এখন? ঢাকার অবস্থার কী অভাবনীয় পরিবর্তন! যানজট নিরসনে বিদেশি আদলে দীর্ঘ উড়াল সেতু, ঊষবাধঃবফ  বীঢ়ৎবংং ধিু, দুর্ঘটনা এড়াতে দৃষ্টি নন্দন ফুট ওভার ব্রিজ, বহু উঁচু ভবন, বিনোদন পার্ক, ইকোপার্ক নির্মাণ হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে তা বোধ করি স্বয়ং রাজউক বা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনও এ টঢ়ফধঃব তথ্য দিতে হিমসিম খাবে। আর গাড়ির সংখ্যা তো বলে শেষ করার নয়।


আজ আমাদের দেশে ধানের ফলন ও উৎপাদন অনেক গুণ বেড়েছে, যা প্রায় ৪১৩.২৫। আলু উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ টনের বেশি পরিমাণ, যা আমাদের সরকার, কৃষি বিভাগ এবং আমাদের সচেতন কৃষকদের ঐকান্তিক চেষ্টা, শ্রম, সাফল্যের ফসল ও কৃতিত্ব। সুতরাং এখানে কয়েকটি ভধপঃড়ৎ বেশি কাজ করে। তা হলো মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মাটি ক্ষয়রোধ, সেচ ও নিকাশ সঠিক ভাবে করা। এ জন্য দরকার উপযুক্ত জাতের উন্নত বীজ, বীজ বপন, চারা রোপণ, কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার ও সঠিক পরিচর্যা। এখানে একটি বিষয় হলো কীটনাশক ব্যবহার না করলে ফসল ভালো হয় না । এমনকি কীটপ্রতঙ্গ ও ছত্রাকে সারা ক্ষেত বিনাশ করে দিতে পারে। এখন এগুলো দমন করতে গেলে মাটিতে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাখ লাখ ইরড়সং বা গরপৎড়নবং  আছে তার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা বাঞ্চনীয়। এখানে উৎপাদন বাড়াতে গেলে  মাটির জীবাণু ও কীট-পতঙ্গের  কিছু ক্ষতি হতে পারে যা পরিবেশের বিরূপ প্রভাব পড়ে কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে, বাঁচার প্রয়োজনে পরিবেশ সুরক্ষায় সহনীয় পর্যায়ে সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে মাটিতে সার ও কীটনাশক যেমন ব্যবহার করা উচিত তেমনি শিল্প ও   কলকারখানা স্থাপন, ভবন নির্মাণ, বিপণি বিতান প্রতিষ্ঠা সুষ্ঠু ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে স্থাপন করা বাঞ্ছনীয়।
আমরা জানি সব উন্নয়নের মূলে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব থাকে এবং এ ক্ষতি কিছুটা হলেও আমাদের সহ্য করতে হবে। কারণ শিল্পায়ন ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত অন্যায়। সে কারণে ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ প্রয়োজন। কারণ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ংযড়ঁষফ হড়ঃ নব ংঃড়ঢ়বফ. সব কিছু করার আগে আমাদের নৈতিকতা বা গড়ৎধষরঃু এর উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সবার আগে দেশকে ভালোবাসতে হবে ও পরিবেশ সুরক্ষায় সবাইকে নজর দিতে হবে। পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কারণ শিশু হাঁটা শিখে চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে থাকে না। আপন মনে চলতে চায় নিজ পরিমÐলে। এখানে শুধু সরকার বা শিল্প উদ্যোক্তাকে দোষারোপ করলে চলবে না। এমনকি, রাস্তায় থুথু ফেলা থেকে শুরু করে চকোলেটের খোসা ফেলা বন্ধ করা এবং যত্রতত্র আবর্জনা ও মলমূত্র ত্যাগ করা, কলার খোসা ফেলা, বোতল নিক্ষেপ করা এসব ধরনের কাজও পরিত্যাগ করতে হবে। বর্তমানে আমাদের প্রায় ১ কোটি লোক বিদেশে অবস্থান করে। তারা যথেষ্ট সচেতন। ঘধঃঁৎব বদলের সাথে সাথে তাদের মতো আমজনতার চরিত্রও বদল করতে হবে। সবাইকে পচ্ছিন্ন পরিবেশ সুরক্ষায় মনোযোগী হতে হবে। মানবকে প্রকৃতি প্রেমিক হতে হবে; পরিবেশবান্ধব হতে হবে এবং প্রকৃতির সাথে সংযোগ বৃদ্ধি অপরিহার্য। এখানে ধনী-গরিব বলে কথা নয়। পরিবেশ উন্নয়ন ও সুস্থ পরিবেশ সুরক্ষায় সবার একান্ত চেষ্টা, শৃঙ্খলা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তবেই পরিবেশ উন্নয়ন সম্ভব। শুধু আইন প্রণয়ন করে শতভাগ পরিবেশ উন্নয়ন ও সুরক্ষা করা যাবে না। ধূমপান নিষিদ্ধের আইন করেও ধূমপান করা থেকে বিরত রাখা যায়নি। প্রায় অধিকাংশ ধূমপায়ী জনসম্মুক্ষে ধূমপান করে থাকে। এক্ষেত্রে জনগণের স্বাস্থ্য, পরিবেশ সচেতনতা ও আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
আমরা জানি গাছ আমাদের পরিবেশ উন্নয়নের অনন্য বন্ধু। তপ্তদুপুরে ক্লান্ত পথিকই কেবল বোঝেন বট-বৃক্ষের নিচে কত আরাম ও শ্রান্তি। গাছ বায়ুমÐল শীতল রাখে। গাছ পশুপাখির আশ্রয় ও খাদ্য এবং অক্সিজেন যোগান দেয়। গাছ সূর্যালোকের সাহায্যে বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে সালোক সংশ্লেষণ এর মাধ্যমে শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে এবং শ্বসন প্রক্রিয়ায় পরিবেশে ও অক্সিজেন এর ভারসাম্য রক্ষা হয়। কিন্তু আমরা অপরিকল্পিতভাবে নির্বিচারে গাছ কেটে বৃক্ষ নিধন করছি। ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলছি এবং এৎববহ যড়ঁংব বভভবপঃ -এর ফলে ওজন স্তরে ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে এবং পৃথিবীর পরিবেশ বাসযোগ্যহীন হয়ে উঠছে। মাটিতে ডধঃবৎ ঃধনষব বা পানির স্তর উন্নয়নে গাছ ভ‚মিকা পালন করে। মৃত্তিকার বীর সন্তান গাছ; আসলে গাছ আমাদের নিত্যদিনের বন্ধু। গাছ আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, চিকিৎসা, শিক্ষা উপকরণ, আসবাবপত্র সর্বোপরি জীবন রক্ষা করে। অর্থাৎ জন্মের পর দোলনা হতে মৃত্যুর পর খাটিয়া, কবর ও হিন্দুদের সৎকার পর্যন্ত গাছের প্রয়োজন। যত্রতত্র গাছ থাকলে আশপাশের ময়লা আবর্জনা খেয়ে কাক-পক্ষি, পশু-পাখি ও ক্ষুদ্র্র গরপৎড়ড়ৎমধহরংস অতি দ্রæত আবর্জনা উবপড়সঢ়ড়ংব করে ওহড়ৎমধহরপ বস্তুকে অতিদ্রæত ঙৎমধহরপ ঈড়সঢ়ড়ঁহফ এ পরিণত করতে পারে। এর ফলে বায়োগ্যাস প্রস্তুত করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অবশিষ্ট অংশ মৃত্তিকার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার সঠিক বাস্তবায়নের জন্য ঠবৎসর পড়সঢ়ড়ংঃ সবঃযড়ফ প্রয়োগ করে জৈবসার উৎপাদন এবং সাথে সাথে পরিবেশ উন্নয়ন করা সম্ভব। যাহোক গাছ যে পরিবেশ সুরক্ষা, শীতল বায়ু সৃজন, বৃষ্টিপাতের নিয়ামক ও ঝড়ঝঞ্চা প্রতিরোধে একক রক্ষা বুহ্য তা আর আজ বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিকে সুন্দরবন ও উপক‚লীয় সৃজিত ম্যানগ্রোভ বন বাংলাদেশের বিশাল রক্ষা বুহ্য বা ঝযবষঃবৎ নবষঃ । যে কারণে সিডর, সাইক্লোনসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতে বাংলাদেশ রক্ষা পাচ্ছে।
পরিবেশ উন্নয়ন ভাবনা এবং জনসংখ্যার চাপ এ দু’টি বিষয় আজ সচেতন সব মহলকে ভাবিয়ে তুলছে। দ্রæত নগরায়ন ও সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সবার কাম্য। কিন্তু আমরা সারা দেশের জেলা ও উপজেলা শহরে দেখতে পাই, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় সীমিত পরিসরে গণসৌচাগার এর ব্যবস্থা করে থাকে। অনেক স্থানে তাও নেই। আর থাকলেও
ব্যবহার অনুপযোগী। অনেকটা পুরনো দিনের রেলস্টেশনের টয়লেটের মতো। তবে উন্নত পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন নগরী সৃষ্টির জন্য সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব বেতনধারী ংঃধভভ ওহফরমবহঁং ভৎঁরঃং দিয়ে মার্কেট বিপণি বিতানসহ যেখানে লোক সমাগম আছে সেখানে উন্মুক্ত পরিচ্ছন্ন টয়লেট স্থাপন ও সার্বক্ষণিক পরিচর্যার জন্য স্থায়ী লোক নিয়োগ করে পরিচ্ছন্ন নগরী ও পরিবেশ উপহার দেয়া সম্ভব। কারণ আমরা জানি পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কেউ থুথু ও পানের পিক ফেলে না। ময়লা আর্বজনা ফেলতেও ভয় সংকোচ করে। আশার কথা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত প্রচেষ্টায় ও মাননীয় যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরর বিশেষ চেষ্টায় ঢাকা গাবতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও প্রায় সব রেলস্টেশনের টয়লেট ব্যবহার উপযোগী হয়েছে এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করছে।
পরিবেশ ক্রমান্বয়ে বৈরী হয়ে উঠছে। উষ্ণ হচ্ছে সারা দেশের পরিবেশ। মরে যাচ্ছে খাল-নদীসহ বড় বড় গাছপালা, মাটির ক্ষুদ্র জীবাণু ও বন্য জীব জন্তু। কাজেই দ্রæত উত্তোরণের জন্য নদী, খাল, বায়ু তথা পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে। ময়লা, আবর্জনা, বর্জ্য, মলমূত্র, চিকিৎসা বর্জ নদী, খাল-বিল ও যত্রতত্র ফেলা যাবেনা। আবর্জনা ও বর্জ্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রিসাইক্লিং ও ব্যবস্থাপনা করতে হবে।  খাল ও নদী পুনঃখনন করে নাব্যতা বাড়াতে হবে ও বৃষ্টির পানি দ্রæত নিঃষ্কাশন করতে হবে। ফাঁকা জায়গায় দ্রæত বর্ধনশীল প্রজাতির গাছ রোপণ করতে হবে। নদী ও খাল পাড়ে দ্রæত বর্ধনশীল প্রজাতির গাছ রোপণ ও সেচ নিকাশের ব্যবস্থা ও যতœ-পরিচর্যার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করে সবুজ নগরায়ন গড়ে তুলতে হবে।

উন্নত বিশ্বের জলবহুল শহর যেমন- সাংহাই, টোকিও প্রভৃতি শহরে যেভাবে মলমূত্র ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা করা হয় সেভাবে করতে হবে। আমরা জানি জমিতে অধিক পরিমাণ ফসল ফলাতে হলে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অধিক সার ও পুষ্টি সরবরাহ, সেচ ও পরিচর্যা করা পরীক্ষিত সত্য। আবার যে গাভী অধিক দুধ দেয় তার জন্য প্রচুর খাবার জোগান দিতে হয়। যত সমস্যাই থাকুকনা কেন আমাদের সবার সচেতনতা, দায়িত্ব-কর্তব্য, শিষ্ঠাচার, শৃঙ্খলা,বিবেক-বুদ্ধি, নৈতিকতা, সততা সবকিছুর সমন্বয়ে বনায়ন, বন সংরক্ষণ, পরিবেশ উন্নয়নও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা অতি জরুরি। সে জন্য সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, মুক্ত মৃদুমন্দ বাতাস, বনজ, দৃষ্টিনন্দন ও ফুলেল পরিবেশ কাম্য। সবার একান্ত আগ্রহ, প্রচেষ্টা, উদ্যোগ, অনুসরণ, অনুকরণ, দৃষ্টান্ত ও অনুরণন আবশ্যক।


দ্রæত বর্ধনশীল ও অধিক মূল্যবান  প্রজাতির গাছের চারা দ্বারা ফাঁকা জায়গা ও চর বনায়ন করে এবং জেগে ওঠা নদী ও চরে উপযুক্ত প্রজাতির দ্বারা সবুজের সমারোহ গড়ে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির দ্বারা উপক‚লীয় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বনায়ন করলে গাছের শ্বাসমূল (চহবঁসধঃড়ঢ়যড়ৎব) বাইরে থাকার ফলে ভ‚মিক্ষয় ও নদী ভাঙন রোধ হয়। এ প্রক্রিয়ায় বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠা চরে ও উপক‚লীয় এলাকায় বনায়ন করে সবুজায়ন ও ঝযবষঃবৎনবষঃ গড়ে তোলা সম্ভব। রাস্তা, রেললাইন, বাঁধ, স্কুলসহ  সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফাঁকা জায়গা ফলদ ও বনজ প্রজাতির দ্বারা বনায়ন করে বনভূমির আয়তন শতকরা ১৭ ভাগ হতে ৩০ ভাগের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া এবং প্রাণ বৈচিত্র্যের উন্নয়ন ঘটানো দরকার। আমাদের  দেশি আদি ফল (ওহফরমবহড়ঁং ভৎঁরঃং) ও ফসল যেমন- শরিফা, আতা, ডেউয়া, জাম, গাব, কাউ, আশঁফল, জামরুল, জাম্বুরা, চালতা, কামরাঙা, সফেদা, আমড়া, কুল, টক বরই, বেল প্রভৃতির সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে আবাদ করে ভিটামিন, পুষ্টি  ও ওষুধি গুণাগুণ বৃদ্ধিকরণের মাধ্যমে পাখপাখালির প্রাচুর্যতা তথা জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন ঘটানো আবশ্যক।

সবার একান্ত চেষ্টা, শ্রম, মেধা ও উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তিসমূহের সফল বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে  বৈরী পরিবেশ মোকাবিলা করা সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্য  ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। কাজেই বলতে হয়-
সুস্থ দেহ, উন্নত মন,
গড়ে তুলব বাসযোগ্য ভুবন।

0 মন্তব্য
0

কমেন্ট করুন